আচ্ছা ফ্রিল্যান্সিং ব্যপার টা কি? ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর
জোয়ার শুরু হয় মূলত ৬ বছর আগে ২০১০ সালের দিকে। তখন মানুষ ভাবতো অনলাইনে আয়
করার একমাত্র উপায় হল ফ্রিল্যান্সিং। এখন অবশ্য সময় বদলে গিয়েছে এবং এখন
অনলাইনে আয় করার বিভিন্ন উপায়ের সাথে মানুষ পরিচিত হয়েছে যেমন এফিলিয়েট
মার্কেটিং, ডিজিটাল সার্ভিস বিক্রি, সিপিএ এবং ইত্যাদি।
তবে আজকের আর্টিকেল এসব নিয়ে নয়। আজকে আমরা কথা বলবো ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং করে কিভাবে অনলাইনে অর্থ উপার্জন করা যায়।
শুরু করার আগেই বলি, আপনারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফেসবুক পেজ অথবা আশে
পাশে ব্যানারে যখন দেখেন যে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক কোচিং তখন মনে রাখবেন, এর
বেশির ভাগ ই ভুয়া। কোচিং করানো খুব সহজ, ফ্রিল্যান্সিং অতটা সহজ নয়। তাই
অনেকেই কোচিং এর দিকে ঝুঁকে পড়েন ফ্রিল্যান্সিং এ নিজেরা সফল না হয়ে। এ
ব্যপারে সতর্ক থাকবেন।
এবার আসুন আসল আলাপ শুরু করি আমরা। ফ্রিল্যান্সিং ব্যপার টা কি?
ফ্রিল্যান্সিং কি?
সহজ করে বললে কোন পার্মানেন্ট মাসিক চুক্তি ছাড়া যখন কেউ কারো জন্য
প্রোজেক্ট এর ভিত্তিতে কোন কাজ করে, সেটাকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং। এটা হতে
পারে কোন রেস্টুরেন্ট এর জন্য আপনি ইন্টেরিওর ডিজাইন করলেন, বা কোন
কোম্পানির জন্য একটা এপ বানিয়ে দিলেন, তাই না?
এখন কথা হল, অনলাইন এর সাথে ফ্রিল্যান্সিং ব্যপার টা কিভাবে এক হচ্ছে?
এক হবার কারণ হল ২টি। প্রথমত, অনলাইনে এমন অনেক কাজ আছে যার জন্য পৃথিবীর
বেশির ভাগ দেশের কোম্পানি আউটসোর্স করতে আগ্রহী হয়। আউটসোর্স করা মানে হল
এক দেশের কাজ অন্য দেশ থেকে করিয়ে নেয়া যেখানে সস্তায় পাওয়া যায়। যেমন
বাংলাদেশ এর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি।
এখন কথা হল, নরমাল কাজ, যেমন রেস্টুরেন্ট এর ইন্টেরিওর ডিজাইন এর জন্য
যদি কোন কোম্পানি ফ্রিল্যান্সার ও নেয়, তাতেও সেই ফ্রিল্যান্সারের একই দেশে
থাকতে হবে, তাই না? কারণ ফ্রিল্যান্সার এর সেখানে যেতে হবে, তারপর কাজ
করতে হবে। কিন্তু ধরুন এমেরিকান একটা কোম্পানি একটা এপ বানাবে বা একটা লোগো
বানাবে। তখন?
এখানেই চলে আসে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইনে আয় করার ব্যপার টি।
এমন অসংখ্য কাজ রয়েছে যার জন্য একটা কোম্পানি এবং একজন ফ্রিল্যান্সার এর
কখনো দেখা হবার প্রয়োজন হয় না। এই কাজ গুলোর জন্য কোম্পানি রা চায় বিভিন্ন
দেশ থেকে ফ্রিল্যান্সার দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে। কোম্পানির ও খরচ কম হয়, এক ই
সাথে কম দামে ভাল কাজ ও পাওয়া যায়। এভাবেই ফ্রিল্যান্সিং ইন্ডাস্ট্রি টা
গড়ে উঠেছে।
কিভাবে শুরু করবো ফ্রিল্যান্সিং?
এখন পর্যন্ত পড়লে আপনার ইতোমধ্যে আইডিয়া হয়ে গিয়েছে ফ্রিল্যান্সিং
ব্যপার টা কি। এখন কথা হল, কিভাবে শুরু করবেন ফ্রিল্যান্সিং? যেই মানুষ
গুলো কাজ দেবে তাদের আমরা পাবো কোথায়? আর কাজ নেবোই বা কিভাবে? কাজ শেষে
পেমেন্ট ই বা নেবো কিভাবে? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুব সোজা।
যখন বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং এর জোয়ার শুরু হল, বেশ কিছু কোম্পানি
তৈরি হল যাদের কাজই হল বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সার দের এক করা। সবচেয়ে জনপ্রিয়
নাম এক্ষেত্রে আপ-ওয়ার্ক। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সার, বা ফিভার ও খুব অল্প কয়েক বছরে অনেক ভাল অবস্থান এ চয়ে গিয়েছে।
প্রতিটি মার্কেটপ্লেস এর আছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট। সবচেয়ে ভাল হবে আপনি
মার্কেটপ্লেস গুলো তে একটু ঘুরে আসুন। দেখুন কি হচ্ছে। এখন ই সাইন আপ করে
ফেলবেন না। সাইন আপ করার আগে আপনার আগে ঠিক করতে হবে আপনি কি করবেন।
প্রথম ধাপঃ কাজ শেখা
আপনি যদি কাজ না জানেন, আপনি দুনিয়ার সব ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস এ
সাইন আপ করে ফেললেও কিছু হবে না, তাই না? আপনার অবশ্যই কাজ জানতে হবে।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলো তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশি,
ফিলিপাইন, ভারত সহ অনেক দেশের ভাল ভাল ফ্রিল্যান্সার রা। তাই যদি কাজ না
জানেন ভাল মত, একাউন্ট খুলে কোন লাভ ই হবে না। তাই শুরু করতে হবে কাজ শেখার
মধ্য দিয়ে।
প্রশ্ন আসতে পারে, কি শিখবো?
এজন্য প্রথমেই চলে যান আপ-ওয়ার্ক স্কিল লিস্ট এ। এখানে আপনি দেখতে পারবেন একটি লিস্ট যেখানে যত ক্যাটাগরির কাজ খোঁজে ক্লায়েন্ট রা, সব ক্যাটাগরি দেখতে পারবেন।
ভালমতো দেখুন। হুজুগের বশে পড়ে বা সোজা ভেবে কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না।
মনে রাখবেন, সোজা কাজে কম্পিটিশন ও হয় অনেক বেশি। লিস্ট টা সময় নিয়ে দেখে ১
টি ক্যাটাগরি ঠিক করুন যেটার কাজ আপনি শিখবেন। মনে রাখবেন, একজন মানুষ ২০
হাজার টাকার চাকরির জন্য ১৪ বছর পড়াশোনা করে। আপনি যেই ক্যাটাগরি ই সিলেক্ট
করুন, যদি চান ফ্রিল্যান্সিং কে একটি ফুল টাইম ক্যারিয়ার বানাবেন, তাহলে
অবশ্যই আপনাকে ভাল মত কাজ শেখায় ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় দিতে হবে।
যখন সিলেক্ট করে ফেলবেন কি শিখবেন, এর পরের কাজ হল এই জিনিস কিভাবে শেখা
যায় তা খুঁজে বের করা। আবারো বলছি, কোচিং সেন্টারে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। আপনি
কি শিখতে চান সে বিষয়ে গুগল করে পড়া শুরু করুন। উদাহরণ স্বরূপ, যদি চান
গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে, গুগল এবং ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও এবং আর্টিকেল পাবেন
কিভাবে শেখা যায়, টিউটোরিয়াল এসব এর ওপরে। শুরু করে দিন। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা
সময় দিন। ৬ মাস সময় নিন। ৬ মাস পর আপনি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবেন আপনার
ক্যারিয়ার গড়ার জন্য।
দ্বিতীয় ধাপঃ মার্কেটপ্লেস
এখন যেহেতু আপনি কাজ শিখে গিয়েছেন, এখন আপনার কাজ হল মার্কেটপ্লেস গুলো
তে একাউন্ট খোলা। সব জায়গায় একাউন্ট খোলার দরকার নেই। আপনার কাজ এর উপর
ভিত্তি করে ২ টি মার্কেটপ্লেস ঠিক করুন যেখানে আপনি একাউন্ট খুলবেন।
প্রতিটা মার্কেটপ্লেস এর আলাদা রুল থাকে। সেগুলো নিয়ে আগে স্টাডি করে নেবেন
ভালমত যেন পরে হটাত একাউন্ট ব্যান না হয়ে যায়।
তৃতীয় ধাপঃ টাকা ওঠানো
আপনি মার্কেটপ্লেস এ একাউন্ট খুললেন, বিড করলেন এবং কাজ ও করলেন। টাকা ওঠাবেন কিভাবে? আমরা যারা প্রথম দিকের ফ্রিল্যান্সার, তাদের জন্য এটা একটা বিশাল সমস্যা ছিল। টাকা ওঠানো নিয়ে অনেক কাহিনী। এখন দিন বদলে গিয়েছে। এখন ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা ওঠানো বিকাশ এর থেকেও সহজ। প্রতিটা মার্কেটপ্লেস ই ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে পেমেন্ট পরিশোধ করে। এছাড়া সবার ই পেওনিয়ার কার্ড এর মাধ্যমে টাকা ওঠানোর সুযোগ দেয়া আছে। পেওনিয়ার থেকেও বাংলাদেশের যে কোন ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ টাকা যেতে ২-৩ দিন এর বেশি সময় লাগে না এখন আর।
আজকে থেকেই শুরু করে দিন। একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার আপনার অপেক্ষায়।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ReplyDelete